Date:

economy


পাটের ব্যবসায় ভাঁটা ।

দোতলা প্রেস কারখানা ভবনের দুই পাশে বিশাল আকারের ৩৮টি গুদাম। 

গুদামগুলোর আয়তন সাড়ে পাঁচ লাখ বর্গফুট। সেখানে যাচাই-বাছাই শেষে শ্রমিকেরা মাথায় করে পাট নিয়ে যাচ্ছেন কারখানার ওপরের তলায়। তারপর সেই পাট ওজন করে দৈতাকার প্রেস মেশিনের একটি অংশে রেখে মোটা দড়ি দিয়ে প্যাঁচানো হয়। তারপর মেশিনে চাপ প্রয়োগ করে বেল আকার দেওয়া হয়। প্রতি বেলে ১৮২ কেজি পাট থাকে।
মেশিন থেকে প্রতি বেল স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিচতলায় চলে যায়। তারপর নির্দিষ্ট ট্রলিতে করে সেগুলো আবার রপ্তানির জন্য গুদামে নিয়ে রাখা হয়। ট্রলি চালানোর জন্য পুরো কারখানা চত্বরে রয়েছে রেললাইন। আবার বিভিন্ন এলাকা থেকে নদীপথে কাঁচা পাট আনার জন্য কারখানার ভেতর পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা নদীর একটি চ্যানেল আছে। পাটবাহী ট্রলার কিংবা বড় নৌকা চ্যানেল দিয়ে কারখানায় আসে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকার কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) লিমিটেডের জুট বেলিং কারখানার ভেতরের চিত্র এটি। ১ জুলাই কারখানা চত্বর ঘুরে দেখা যায়, অল্প কয়েকটি গুদামে তিন-চারজন করে শ্রমিক পাট যাচাই-বাছাইয়ে কাজ করছেন। কিছু গুদাম ফাঁকা। তবে প্রেস হাউস বেশ কর্মচঞ্চল। দুটি প্রেস মেশিনে প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। গুদাম থেকে কারখানায় পাট আনতে ব্যস্ত আরও অর্ধশতাধিক শ্রমিক। সবারই পুরো শরীর পাটের সোনালি আঁশে মাখামাখি।
৩০ বছর ধরে কারখানার প্রেস মেশিন চালানোর কাজ করেন শ্রমিক মো. ইয়াসিন। তিনি বলেন, বর্তমানে কাজ কম থাকায় কারখানাটি ছয় ঘণ্টা চলছে। তবে পাটের ভরা মৌসুম আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাস কারখানায় আট থেকে দশ ঘণ্টা জুট বেলিংয়ের কাজ হবে। 
সোনালী আঁশ চাষে প্রকৃত দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। 

কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট আগে কাঁচা পাট রপ্তানি করলেও বর্তমানে করে না। তাদের জুট বেলিং কারখানা চত্বরের ৩৮ গুদাম ভাড়া নিয়েছে ১২টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। তারাই কুমুদিনীর প্রেস মেশিন ব্যবহার করে পাটের বেল তৈরি করে। প্রতি বেলের জন্য গুনতে হয় ২৩৫ টাকা।
জানতে চাইলে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পুরোনো কর্মকর্তা জগন্নাথ পোদ্দার বলেন, কারখানায় আগে প্রতিদিন ৮০-৮৫ হাজার মণ পাট আসত। দিন-রাত মিলিয়ে ১৬ ঘণ্টা কাজ হতো। এখন সকালে চালু করলে দুপুরে বন্ধ করে দিতে হয়। এই হচ্ছে অবস্থা। তিনি বলেন, ‘আমাদের কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩ লাখ বেল। কিন্তু ১ লাখ ২৫ থেকে ৩০ হাজার বেলের বেশি বর্তমানে হচ্ছে না। ব্যবসা মন্দা, তাই চারটি প্রেস মেশিনের মধ্যে দুটি চালানো হচ্ছে। কিছু গুদাম তুলা ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
প্রাচ্যের ড্যান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জের কাঁচা পাটের ব্যবসায় বহুদিন ধরেই মন্দা চলছে। বহির্বিশ্বে চাহিদা কমে যাওয়ায় কাঁচা পাট রপ্তানি কমে গেছে। নারায়ণগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, কাঁচা পাট রপ্তানি কমে যাওয়ায় রপ্তানিকারকদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। সরকারি সাতটি প্রেস হাউস বন্ধ। বেসরকারি পর্যায়ে সাতটি প্রেস হাউস চালু থাকলেও প্রায় সবগুলোই চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১৬ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের কাঁচা পাট রপ্তানি হয়। বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ কাঁচা পাট রপ্তানি কমে ১৫ কোটি ৫৬ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে গত অর্থবছরে রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশের কাঁচা পাট রপ্তানির গন্তব্য পাকিস্তান, ভারত, চীন, নেপাল, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, হংকং, তিউনিসিয়া, আইভরি কোস্ট, এল সালভেদর ও ফিলিপাইন।
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা এলাকায় কুমুদিনীর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের আরেকটি জুট বেলিং কারখানা ছাড়াও পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ কারখানা আছে। ২ জুলাই কারখানাটিতে ঢুকতেই প্রেস হাউস চোখে পড়ল। পাশেই সারি সারি গুদাম। নদীর পাড়ে পাটবাহী ট্রলার ভেড়ার জন্য আছে নিজস্ব জেটি।
কারখানা ঘুরে দেখা গেল, শ্রমিকেরা বেল করা পাট ট্রলিতে করে নিয়ে গুদামে রাখছেন। গুদামে পাটের গ্রেডিংয়ের কাজ করছেন বেশ কিছু শ্রমিক। কারখানাটিতে চার শ শ্রমিক কাজ করেন। বর্তমানে পাটের ভরা মৌসুম না হওয়ায় কয়েকটি গুদাম গম রাখার জন্য ভাড়া দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ নিজেরাই কাঁচা পাট বেল আকারে রপ্তানি করে। নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি খুলনার দৌলতপুর, সৈয়দপুর, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাটের ব্যবসা আছে প্রতিষ্ঠানটির। সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক হিসেবে কয়েক দফা জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পুরস্কার পেয়েছে পপুলার।
প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (রপ্তানি) স্বপন কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ করে পাটের দাম মণপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় খুব মুশকিলে আছি। কারণ এই বাড়তি দাম তো ক্রেতারা দেবেন না। তিনি বলেন, ‘কাঁচা পাটের ব্যবসায় মন্দা চলছে। গত অর্থবছর ২ লাখ ৮৮ হাজার বেল কাঁচা পাট রপ্তানি করেছি আমরা। কিন্তু কয়েক বছর আগেও আমাদের রপ্তানি ছিল ৪-৫ লাখ বেল।’
কাঁচা পাট রপ্তানিকারকদের সমিতি বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) রেজিস্ট্রার কার্যালয় আছে নারায়ণগঞ্জে। সেখানে গিয়ে সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বহির্বিশ্বে পাটের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে ব্যবসা পড়ে গেছে। আবার সরকারের নীতির কারণেও আমরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। যেমন ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ মাস সব ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল মন্ত্রণালয়। তখন বিদেশি অনেক ক্রেতা আমরা হারিয়েছি। তাঁরা অন্য দেশ থেকে পাট কেনায় ঝুঁকে পড়েন। চলতি বছর আবার তিন ধরনের কাঁচা পাট রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।’
দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা যেসব পাট রপ্তানি করি, তা খুবই নিম্নমানের। এসব পাট দিয়ে চটের বস্তা, সুতা কিছুই তৈরি করা যায় না। তাই মন্ত্রণালয়ের উচিত রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে বরং নতুন বাজার খোঁজা। তাহলে রপ্তানি আয় বাড়বে। ব্যবসায়ীরাও বাঁচবেন।’ 
সুত্রঃ প্রথম আলো । 

No comments:

Post a Comment

Hello

add code

জেনে নিন আমাদের সমাজের ২৪৪ টি কুসংস্কার ।

১) বাচ্চাদের দাঁত পড়লে ইঁদুরের গর্তে দাঁত ফেললে সুন্দর দাত উঠে। ২) খাওয়ার সময় সালাম দেয়া-নেয়া যাবে না। ৩) কাউকে ...

Categories

Add Code