Date:

গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের যা যা করনীয়।

একটি শিশু এসে একজন নারীর জীবনকে ধন্য করে তোলে। একজন নারী এক জীবন থেকে নতুন জীবনে পদার্পণ করে মাতৃস্নেহ নিয়ে।সন্তান জন্ম দিলে একজন  জন্মদাত্রী হওয়া যায়। তবে প্রকৃত মা হতে হলে সন্তানের সঠিক  প্রতিপালন গুরুত্বপূর্ণ। তাই গর্ভবতী অবস্থায় একজন মায়ের ইসলামিক দৃষ্টিতে কিছু কাজ ও শরিয়াত সম্মত কিছু দিক নির্দেশনা যা মেনে চললে সন্তানের ভবিষ্যৎ সুন্দর ও  সুখময় করে তলেন মহান আল্লাহ।

মায়ের গর্ভে শিশুর শিক্ষা পর্ব ঃ
আলহামদুলিল্লাহ্‌! প্রত্যেক মায়ের গর্ভে শিশু চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্য  আকারে অবস্থান করে। অতঃপর পরবর্তী চল্লিশ দিন জমাট রক্তে পরিনত হয়।এরপর তা আরো চল্লিশ দিনের মধ্যে মাংসের টুকরায় পরিণত হয়।অতঃপর আল্লাহ্‌ একজন ফেরেশতাকে প্রেরণ করেন যাকে মানব শিশুটির ব্যাপারে চারটি বিষয় অর্থাৎ রিজিক , আয়ুকাল , ভাগ্যের ভাল  ও মন্দ সম্পর্কে লিখতে বলা হয়। এরপর  উক্ত মানব ভ্রূণের মধ্যে আত্মা (জীবন) দিয়ে দেয়া হয়। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম) ।
মেডিক্যাল সাইন্স বলে গর্ভবতী হওয়ার পর প্রথম মাসেই শিশুর হৃদপিণ্ড তৈরি হয় এবং গর্ভধারণের দেড় মাসের মধ্যেই শিশুর হৃদপিণ্ড কাজ করতে শুরু করে। পরবর্তী দু মাসের ভেতর হাত-পা এবং অন্যান্য অঙ্গসমূহ তৈরি হয়ে যায়।তিন মাস পর থেকে সে ধীরে ধীরে বড়ো হতে থাকে। পঞ্চম মাসে সে শুনতে পায়।তাই একজন গর্ভবতী মায়ের উচিত তৃতীয় মাস থেকে একটু জোরে জোরে কোরআন মাজিদ তিলায়ত করা ও হাদিস পড়া।পঞ্চম মাস থেকে পেটের সন্তানের সাথে কথা বলা যেতে পারে।ভালো ভালো কথা বলা অবশ্যয় বাঞ্ছনীয়।যদি প্রথন সন্তান হয় তাহলে সন্তান নড়াচড়া করার জন্য বিশ সপ্তাহ সময় নিতে পারে অর্থাৎ টের পাওয়া যায় ।তবে প্রথম সন্তান না হলে অর্থাৎ দ্বিতীয় বা তৃতীয় হলে ষোলো বা আঠারো সপ্তাহ সময় এর মধ্যে সন্তান নড়াচড়া টের পাওয়া যেতে পারে।
এসময় গর্ভে সন্তান নাভীর মাধ্যমে খাদ্যগ্রহণ করে তিল তিল করে বড় হতে থাকে।তাই মায়ের চরিত্রের  যথেষ্ট প্রভাব সন্তানের উপর পড়ে।কোন মা যদি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত(নামাজ) আদায় করা উচিত।
এসময় টিভির সামনে বসে না থেকে  অশ্লীল গান , নাচ , সিরিয়াল , নাটক , সিনেমা  ইত্যাদি দেখা থেকে বিরত থাকা খুবই জরুরী ।

বরং এসময় সন্তানের জন্য বেশী বেশী দোয়া করা খবই গুরুত্বপূর্ণ।যেমন পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে। যখন হযরত ইমরান (আঃ) এর স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন তখন তিনি এই দোয়াটি পাঠ করেছিলেন।

إِذْ قَالَتِ ٱمْرَأَتُ عِمْرَٰنَ رَبِّ إِنِّى نَذَرْتُ لَكَ مَا فِى بَطْنِى مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّىٓ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ

উচ্চারণঃ ইযকা-লাতিম রাআতু‘ইমরা-না রাব্বি ইন্নী নাযারতুলাকা মা-ফী বাতনী মুহাররারান ফাতাকাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাছ ছামী‘উল ‘আলীম।(সূরা আলে ইমরান । আয়াতঃ ৩৫)

অর্থঃ এমরানের স্ত্রী যখন বললো-হে আমার পালনকর্তা! আমার গর্ভে যা রয়েছে আমি তাকে তোমার নামে উৎসর্গ করলাম সবার কাছ থেকে মুক্ত রেখে। আমার পক্ষ থেকে তুমি তাকে কবুল করে নাও, নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞাত।


এর পরে আরো দোয়া যেমন নিচে উল্লেখিত আয়াত পাঠ করতে পারেন। 

رَبِّ هَبْ لِى مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ ٱلدُّعَآءِ

উচ্চারণঃ রাব্বি হাবলী মিল্লাদুনকা যুররিইইয়াতান তাইয়িবাতান ইন্নাকা ছামী‘উদ্দু‘আই।(সূরা আলে ইমরান । আয়াতঃ- ৩ঃ ৩৮)
অর্থঃ হে, আমার পালনকর্তা! তোমার নিকট থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান কর-নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী। 


رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَٱجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

উচ্চারণঃরাব্বানা-হাবলানা-মিন আঝওয়া-জিনা-ওয়া যুররিইইয়া-তিনা কুররাতা আ‘ইউনিওঁ ওয়াজ‘আলনা-লিলমুত্তাকীনা ইমা-মা-।

অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর। 

সন্তান জন্মের আগের নৈতিক দায়িত্ব ঃ

১। মা-বাবা উভয়ে উত্তম ও ভালো কাজের নিয়াত করা।
২। মা-বাবা উভয়ে হালাল উপার্জন করা।
৩। মা-বাবা উভয়ে হালাল খাবার খাওয়া ।
৪। ওয়াক্ত মত দৈনিক পাঁচ সালাত আদায় করা।
৫। সম্ভব হলে মাঝে মাঝে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা।
৬। সালাতের পর আল্লাহর কাছে একা একা হাত তুলে দোয়া করা।
৭। দুজনেই খুব বেশী বেশী ভালো কাজ করা। 
৮। প্রতিদিন আল-কোরআন অর্থসহ তিলাওয়াত করতে চেষ্টা করা।
৯। নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা।
১০। ইসলামিক বই পড়া , মানুষের সাথে ভাল আচরণ করা। 
১১। গরীবের মাঝে দান-সদকা করা।
১২। গীবত পরনিন্দা একেবারেই না করা, অহংকার না করা, খারাপ কাজ ও খারাপ কথা না বলা ।
১৩। টিভি বা ইন্টারনেটে অশ্লীল কোন কিছু না দেখা বা শোনা।


  
সন্তান জন্মের আগের স্বাস্থ্যগত দায়িত্ব ঃ

১। ডাক্তার দ্বারা নিয়মিত চেকআপ করানো।
২। গর্ভবতীর উপর কোন প্রকার মানসিক বা দৈহিক চাপ সৃষ্টি না করা।
৩। হাসিখুশি থাকা, পরিষ্কার পরিছন্ন থাকা, ঠিকমত খানা পিনা করা, পরিমান মত পানি পান করা ,প্রতিদিন গোসল করা  ও যাবতীয় বিষয়ে যত্নবান হওয়া খুবই জরুরী একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য। 


সন্তান জন্মের পর দায়িত্ব  ঃ

১। সন্তানের সুন্দর ইসলামিক নাম রাখা।।
২। সন্তান জন্মের সপ্তম দিয়ে আকিকা করা। 
৩। মহান আল্লাহর নাম শুনানো। 
৪। মহানবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর দেখানো পথ অনুসারে সন্তানকে লালনপালন করে গড়ে তোলা এবং
৫। সন্তানের সকল প্রকার বালা-মসিবত ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা।

Share:

ADD CODE

Hello

No comments:

Post a Comment

add code

জেনে নিন আমাদের সমাজের ২৪৪ টি কুসংস্কার ।

১) বাচ্চাদের দাঁত পড়লে ইঁদুরের গর্তে দাঁত ফেললে সুন্দর দাত উঠে। ২) খাওয়ার সময় সালাম দেয়া-নেয়া যাবে না। ৩) কাউকে ...

Categories

Add Code